জুয়া খেলার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করল রুবেল মিয়াকে এবং আসামী গ্রেফতার ও মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করল পিবিআই, গাজীপুর।
মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী ভিকটিম রুবেল মিয়া ১। মোঃ কামরুল ইসলাম (৩১), পিতা-মৃত আব্দুস সাহিদ, মাতাআকলিমা খাতুন, সাং-বারইহাটি, থানা-পাগলা, জেলা-ময়মনসিংহকে ইং ০৫/০২/২০২২ তারিখ রাত অনুমান ০৭:০০ ঘটিকায় বাড়ইহাটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ঃ অত্র মামলার বাদীর ছেলে ভিকটিম রুবেল মিয়া (৩২) স্থানীয় টোক নয়ন বাজারে পেঁয়াজু, নিমকি, মুড়ালী ইত্যাদি ঙ্তরি ও বিক্রির ব্যবসা করতো। ইং ০৭/০৪/২০২০ তারিখ রোজ মঙ্গলবার বিকাল অনুমান ০২:৪৫ ঘটিকায় বাদীর ছেলে রুবেল মিয়া এবং মোঃ রিপন, বিমল বর্মন, নাছির উদ্দিন, মোঃ আরিফ, আরিফ মিয়া, দিলিপ ঘোষ টোক নয়ন বাজারস্থিত শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাট হতে একটি ইঞ্জিন চালিত যাত্রীবাহী নৌকা যোগে শ্রীপুর থানাধীন বরমী যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঐদিন বিকেল অনুমান ০৩:০০ ঘটিকার দিকে তারা কাপাসিয়া থানাধীন টোক নগর সাকিনস্থ মৃত আব্দুল হাই মুন্সির চর জমি সংলগ্ন নদীর কিনারে অনুমান ৫০/৬০ গজ উত্তর পাশে পেঁৗছলে এজাহারনামীয় আসামীগণসহ তাদের সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা আসামীগণ অপর একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে গফরগঁাও থানা এলাকা হতে টোক নয়ন বাজারে আসতে থাকা অবস্থায় নৌকার সাইড দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় নৌকার লোকজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে এজাহারনামীয় আসামীগণ সহ তাদের সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা আসামীগণ বাদীর ছেলে রুবেল মিয়া তার সঙ্গীয় যাত্রীদেরকে গালিগালাজ করে এবং লাঠি দিয়ে এলোপাথারীভাবে মারপিট করে নৌকা হতে পানিতে ফেলে দেয়। বাদীর ছেলের সঙ্গীয় যাত্রীরা সাতরিয়ে নদীর তীরে উঠতে পারলেও বাদীর ছেলেকে পাওয়া যায়নি। বাদী লোকমুখে সংবাদ পেয়ে তার আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ছেলেকে খেঁাজাখুজি করতে থাকে। খেঁাজাখুজির একপর্যায়ে ইং ০৯/০৪/২০২০ তারিখ সকাল অনুমান ১০:১৫ ঘটিকায় কাপাসিয়া থানাধীন টোক নগর সাকিনস্থ মৃত আব্দুল হাই মুন্সির চর জমি সংলগ্ন নদীর কিনারে ভিকটিম রুবেল মিয়ার অর্ধ গলিত লাশ পাওয়া যায়। কাপাসিয়া থানা পুলিশ বাদীসহ উপস্থিত লোকজনের উপস্থিতিতে ভিকটিম এর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। এই সংক্রান্তে ভিকটিম এর বাবা মোঃ মফিজ উদ্দিন বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় এজাহার দায়ের করলে মামলা নং-০৬, তারিখ-০৯/০৪/২০২০ খ্রিঃ রুজু হয়। মামলাটি থানা পুলিশ প্রায় ০৬ মাস তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই গাজীপুর জেলার উপর ন্যাস্ত হয়।
ডিআইজি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান মামলাটি তদন্ত করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত ০৭/০৪/২০২০ তারিখ দুপুর অনুমান ০২:২০ ঘটিকায় গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ কামরুল ইসলম বারইহাটি বাজারে থাকাকালীন তার সহযোগী আসামীরা তাকে বারইহাটি বাজার সংলগ্ন নদীর ঘাটে নিয়ে গিয়ে বলে শীতলক্ষ্যা নদীতে বোটে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা চলে। চল গিয়ে ওদের দাবড়ানি দেই এবং জুয়ার বোর্ডের টাকা ছিনিয়ে নিয়ে আসি। তখন বারইহাটি বাজারের খেয়া ঘাট হতে কাশেম মেম্বারের নৌকা নিয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীসহ তার সহযোগী অন্যান্য আসামীরা মামলার ঘটনাস্থল কাপাসিয়া থানাধীন টোক নগর সাকিনস্থ মৃত আব্দুল হাই মুন্সির চর জমি সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে ভিকটিম এর নৌকার নিকট যায়। ভিকটিম রুবেল মিয়া ও তার সঙ্গীয় লোকজন আসামীদের নৌকাটি দেখে দ্রুত গতিতে তাদের নৌকাটি চালিয়ে টোক বাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন গ্রেফতারকৃত আসামী তার সহযোগী আসামীদের নিয়ে ভিকটিম এর নৌকাকে ধাওয়া করে একপর্যায়ে আসামীদের নৌকা থেকে ভিকটিম এর নৌকায় আসামী ১। খোকন মিয়া ২। শফিকুল ইসলাম ৩। সাইদুল ও ৪। মোঃ হেভেন লাফিয়ে উঠে পড়ে। ভিকটিম এর নৌকা থেকে ভিকটিম এর সাথের লোকজন পানিতে লাফ দিলেও ভিকটিমকে আসামীরা ধরে ফেলে। গ্রেফতারকৃত আসামীসহ ও অন্যান্য আসামীরা ভিকটিম এর নিকট থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতে চাইলে ভিকটিমের সাথে আসামীদের ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামীরা তাদের হাতে থাকা লাঠি সোটা দিয়ে ভিকটিম রুবেল মিয়ার মাথায় এবং শরীরের এলোপাথারীভাবে মারধর করে ভিকটিম এর নিকট থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। ভিকটিম রুবেল মিয়া অচেতন হয়ে পড়লে আসামীরা ভিকটিমকে মৃত ভেবে নৌকা থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে ফেলে দেয়। আসামীরা তাদের নৌকা নিয়ে বারইহাটি বাজারে ফিরে যায় এবং আসামীদের প্রত্যেকে ছিনতাইকৃত টাকা ভাগাভাগি করে নেয়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, মামলার গ্রেফতারকৃত আসামী তার সহযোগীদের নিয়ে জুয়ার বোর্ডের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভিকটিম রুবেল মিয়াকে তাদের হাতে থাকা লাঠি সোটা দিয়ে এলোপাথারীভাবে মারপিট করে হত্যা করতঃ লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে উক্ত আসামী নিজেকে জড়িয়ে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে গত ০৬/০২/২০২২ খ্রিঃ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।